ছেলেটি খুব অবাক হয়ে মোবাইলের দিকে তাকালো। প্রায় ৬ মাস পর সেই নাম্বার থেকে কল। মোবাইলের স্ক্রীনে খুব সুন্দর করে লেখা- SHE calling…
৬ মাস আগে তার সাথে মেয়েটির ব্রেকআপ হয়ে যায়। সব ঠিকঠাক, হঠাৎ একদিন মেয়েটি জানালো, “আমি রিলেশনটা কনটিনিউ করতে পারবো না। আমি সিরিয়াস।”
ছেলে: আধো বিশ্বাস আধো অবিশ্বাসে দুলতে দুলতে বললো, “কেনো? কী হইছে?”
মেয়ে :খুব নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিলো, “আমার আরো একটা রিলেশন আছে। আমি সেটাই কনটিনিউ করতে চাই।”
বিশ্বাস করতে পারছিলো না সে । বললো, “আরে ধুর, ফাইজলামি করো ক্যান!”
ফোন কেটে দেয় । এরপর অনেক চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি তার সাথে। সপ্তাহ দুয়েক পর খবর পেয়েছিলো, মেয়েটি ফ্যামিলির সাথে কানাডা চলে গিয়েছে।
এ পর্যন্তই তার নামটা ছেলেটির প্রতি রাতের চোখের জলে আর ফোনবুকের ‘SHE’ নামের আড়ালেই রয়ে গেলো।
এমন অদ্ভুত অপ্রত্যাশিত ব্রেক আপের পর আজ আবার তার কল।ছেলেটি বুঝে উঠতে পারে না কী করবে। শেষমেষ কলটা রিসিভ করলো।
যতটা না অভিমান কিংবা কষ্ট, তার চেয়েও বেশি কৌতুহল ভরা কন্ঠে বললো,
হ্যালো?
কেমন আছো?
তার কন্ঠটা আগের মত আর বাচ্চা বাচ্চা নেই। নারীত্বের ছাপ স্পষ্ট।
বেঁচে আছি। কানাডা থেকে ফিরেছো কবে?
গতকাল। আমি খুব সরি…
বাদ দাও। তারপর কেমন আছো? খুব সুখেই আছো নিশ্চয়?
আমি রিয়েলি অনেক সরি। প্লিজ..
বিএফ কেমন আছে?
প্লিজ… আমাকে মাফ করে দাও…
বিয়ে করে ফেলেছো? বাচ্চা কাচ্চা?
স্টপ! স্টপ ইট!
ওপাশ থেকে চিৎকার করে ওঠে সে । সেই সাথে শোনা গেলো কান্নার আওয়াজ…
প্রতিহিংসা কমিয়ে ছেলেটি শান্তভাবে বললো,
“এমন করলা কেন আমার সাথে?”
কাঁদতে কাঁদতে সে অনেক কথা বললো। কথাগুলোর সারমর্ম করলে যা দাড়ায়, তা হচ্ছে- অন্য কোনো ছেলের সাথে মেয়েটির রিলেশন ছিলো না। তার বাবা একপ্রকার জোর করেই সবাইকে নিয়ে কানাডা যাবার ব্যবস্থা করে ফেলেন। আর ফেরা হবে না, ওখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু হবে, এমনটাই পরিকল্পনা ছিলো। তাই সে সম্পর্কটার আর কোনো ভবিষ্যত নেই এটা বুঝতে পেরেছিলো বলেই ঐ নির্মম নাটকটা করতে হয় তাকে।
সব শুনে ছেলেটি বললো, “দেশে ফিরেছো কেন তাহলে?”
বাবা মারা গেছে…
অভিমানী প্রেমিকের সব দম্ভ নিমেষেই চুরমার হয়ে গেল। শুধু বললো, “তুমি কোথায় এখন? দেখা করো প্লিজ… এই মুহুর্তে…”
রেস্টুরেন্টে টেবিলের ওপাশে বসা মেয়েটা বড্ড অচেনা লাগছে। ঠোট থেকে মুছে গেছে সব স্পর্শের ছাপ। সাবেক প্রেমিকার দিকে তাকিয়ে বললো,
তারপর এখন ফিউচার প্লান কী?
জানি না।
বিয়ে শাদী করে ফেলো একটা।
হুম।
তুমি আমাকে নিয়ে আবার কোনো স্বপ্ন দেখছো না তো? মেয়েটি খুব অসহায়ের মত তার দিকে তাকালো। সে বুঝতে পেরে বললো,
কি অদ্ভুত। আমার কোনো লাইফ নেই? তুমি কি ভেবেছো সারাজীবন ওয়েট করবো তোমার জন্য?
মেয়ে :ওও। আমি সরি।
উঠে দাড়ালো । চোখে জল টলমল করছে। ঘুরে দরজার দিকে পা বাড়ালো। মেয়েরা এভাবেই কান্না লুকোয়। যার জন্য কান্না, তাকে দেখায় না, কিন্তু পৃথিবীবাসীকে দেখায়। চোখের জলের কি মায়াবী অপচয়!
পেছন থেকে হাতটা টেনে ধরলো ছেলেটি। হাসিমুখে বললো, “এই রেস্টুরেন্টের রাইসে লবন অনেক কম। দেখি, কয়েক ফোটা চোখের পানি দিয়ে যাও। চোখের পানি লবনাক্ত।”
মেয়েটা কেঁদে ফেললো । ছেলে :”এত কাঁদো ক্যান? অবশ্য ভালোই হইছে। আমাদের সংসারে লবন কিনতে হবে না। তোমার চোখের পানিতেই রান্না হয়ে যাবে। ইউ নো, চোখের পানি লবনাক্ত!”
তার কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেল।
সত্যিকারের ভালোবাসা হলে সে ফিরে আসবেই.